জবর খবর বাংলা

রজত প্রামানিক ও লাল্টু ভট্টাচার্য্য :  18 অগাস্ট মঙ্গলবার , শান্তিপুর নেতাজি মোরে নেতাজি সুভাষ বসুর মূর্তির  পাদদেশে সকাল 8:00 সময় ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং নেতাজি মূর্তিতে মাল্য দান করে শান্তিপুর সহ নদীয়া জেলার স্বাধীনতা দিবস পালিত হলো শান্তিপুর শহরের বেশ কিছু সমাজ কর্মী এবং সমাজের সর্বস্তরের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের নেতৃত্বে |

1947 সালের 15 ই আগস্ট বহু রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, আন্দোলন, শহীদের প্রান ত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা হলেও বাংলার ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের মেঘ তখনও কাটেনি,একদিকে নোয়াখালীর ভয়ঙ্কর দাঙ্গা অন্যদিকে ভারত পাকিস্তান সীমারেখা নিয়ে বিভ্রান্তি মানুষের মনকে ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল, 15 ই আগস্ট নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদা, দিনাজপুরের, অধিকাংশ মানুষ জানতেন না তারা কোন ডোমনিয়নের অংশ হয়েছেন ভারত না পাকিস্তান। ইতিহাসের পাতায় উল্লেখযোগ্যভাবে লেখা নদীয়া জেলা নিয়ে বিভ্রান্তি আরো বেশি দেখা দেয় ।এই নদীয়া জেলা তে প্রথম তুর্কি আক্রমণ হয়েছিল  ইখতিআর উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির হাত ধরে। এই নদীয়া জেলা তেই বৈষ্ণব আন্দোলন শুরু করেছিলেন অদ্বৈত, নিত্যানন্দ, চৈতন্য মহাপ্রভু।এই জেলাতেই বিশ্বাসঘাতকতার মধ্যে দিয়ে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের পথ। 

অসংখ্য মন্দির মসজিদ রয়েছে নদীয়া জেলায়। তাই দেশ বিভাজনের পর স্যার সিরিল রেডক্লিফ মানচিত্রে যে রেখা টানলেন তাতে করে,মুসলিমরা মনে করেন তারা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এই জন্য 15 ই আগস্ট তারা মুসলিম লীগের পতাকা উত্তোলন করেন। ভয় পেয়ে যান বেশকিছু হিন্দুরা। তারা জানতে পারেননি তারা সত্যিই পাকিস্তানের নাগরিক হয়ে গেলেন কিনা। শেষ পর্যন্ত নদীয়ার তৎকালীন মহারানী জ্যোতির্ময়ী দেবী আসরে নামলেন। সংবিধানের অন্যতম রচনাকার কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য পন্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্র কে ডেকে পাঠালেন। পন্ডিত মৈত্রের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর পন্ডিত মৈত্র যোগাযোগ করলেন নবনিযুক্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর সঙ্গে। সময়টা হয়ে গেল 17 ই আগস্ট। স্যার সিরিল রেডক্লিফ যে সীমারেখা নির্ধারণ করেছিলেন সেই সীমারেখায় বোঝার ভুলে যে অবস্থা হয়েছিল তা সংশোধিত হলো 17 ই আগস্ট। ওই দিন রাত্রে রেডিওতে ঘোষিত হল কোন কোন স্থান ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তৎকালীন নদীয়া জেলার পাঁচটি মহকুমার মধ্যে কৃষ্ণনগর সদর ও রানাঘাট মহকুমা থেকে গেল ভারতের সাথে বাকি মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া চলে গেল পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়ে। সমস্যা মিটে যাবার পর 18 ই আগস্ট নদীয়া জেলার অধিকাংশ স্থান জুড়ে পালিত হল নতুন করে স্বাধীনতা দিবস ।

এই দিনটি নদীয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে থাকে। নদীয়ার বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি শান্তিপুর শহরের ডাকঘর মোড়ে নেতাজি মূর্তির পদতলে একদল সাধারণ মানুষের উদ্যোগে বেশ কয়েক বছর ধরে উদযাপিত হচ্ছে শান্তিপুর তথা নদীয়ার ভারতভুক্তি দিবস। এবারেও যথাযোগ্য মর্যাদায় তা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এইদিনের অনাড়ম্বর এবং ভাবগম্ভীর অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন 95 বছরের বৃদ্ধ ইসমাইল সেখ কারিগর মহাশয় ।পরিবেশিত হয় সুনীল বঙ্গের নেতৃত্বে জাতীয় সঙ্গীত এবং পরে নদীয়া তথা বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা ধনধান্য পুষ্পভরা ।উপস্থিত সকলে গানের সঙ্গে গলা মেলান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সভাপতি সুশান্ত কুমার মঠ,  রজত প্রামানিক, সঞ্জিত কাষ্ট ,কুশল প্রামানিক সহ আরো অনেকে ।

দেশাত্মবোধক আবৃত্তি পরিবেশন করেন ঋতমা নন্দী ও সার্থক ঘোষ, শেষে সৃজিতা বসাকের বন্দেমাতরম সংগীতের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনঅনেকের মন কেড়ে নেয় ।বিভিন্ন বক্তারা শান্তিপুরের প্রথম স্বাধীনতা দিবসের দিনের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেন, স্মরণ করিয়ে দেন শান্তিপুরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা, তুলে ধরা হয় নদীয়া জেলার স্বাধীনতার বিস্তারিত ইতিহাস, তুলে ধরা হয় পন্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্রের অবদানের কথা । সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য 1947 সালের 18ই আগস্ট প্রথম ডাকঘর মোড়ে জাতীয় পতাকা তুলেছিলেন কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য তারই গৃহে অবস্থিত মূর্তিতে মাল্যদান করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

নদীয়া থেকে রজত প্রামানিক ও লালটু ভট্টাচার্য্যের রিপোর্ট

Disclaimer: This story & Video is Published by laltu bhattacharjee and has not been created by JK Bangla News & The authenticity of the video has not been verified.

Post a Comment

Previous Post Next Post