জবর খবর বাংলা

একদিকে আবেগ ও অন্যদিকে বাস্তব , একধারে সেকাল ও অপরদিকে একালের তৃণমূল ছাত্রপরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান বেশ বর্ণময়  , রোমাঞ্চকর ও বর্ণাঢ্য|


লাল্টু ভট্টাচার্য্য , নদীয়া : 
28 অগাস্ট , শুক্রবার পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পালিত হলো শহরের রাজপথ শান্তিপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন অঞ্চল ও শান্তিপুর কলেজের সম্মুখে পালিত হলো শান্তিপুর তৃণমূল ছাত্রপরিষদের নেতৃত্বে এই প্রতিষ্ঠা দিবস | শিক্ষার প্রগতি , সংঘবদ্ধ জীবন ও দেশপ্রেম এই তিন মন্ত্রে উদ্দীপিত ছাত্র সম্প্রদায়কে দেখা গেলো শান্তিপুরের রাজপথে কখনো পায়ে হেঁটে মিছিলে , আবার কখনো দেখা গেলো অলি গলি ধরে পতাকা হাতে বাইক মিছিল করে স্লোগান দিতে দিতে রাজপথে উঠে আসতে | উক্ত দিনে কোথাও অনুষ্ঠিত হয়েছে রক্তদান , আবার কোথাও সম্বর্ধনা প্রদান , মাস্ক বিতরণ ইত্যাদি | কখনো কখনো রাজপথে যানজট দেখা দিলেও তা মুহূর্তেই স্বাবাভিক হতে প্রতক্ষ্য করা গেছে |

প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা যায় বিজ্ঞানী গ্যালিলিও বলেছিলেন সূর্য্য স্থির , পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ , উপগ্রহ এবং নক্ষত্রমন্ডলী সূর্যের চারিকে পাক খাচ্ছে | কথাটি শুনে গ্যালিলিওকে অনেকেই বিকৃত মস্তিস্ক বলে আখ্যা দিয়েছিলো |  পরবর্তীকালে তাকে গ্রেপ্তার হতে হয়েছিল তৎকালীন সমাজে মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানার জন্য | দীর্ঘদিন কারাবাস করেছিলেন গ্যালিলিও , তারপরে প্রমাণিত হয়েছিল গ্যালিলিও ঠিক , এবং ধর্মযাজকররা ভুল ; সূর্য্য স্থির , পৃথিবীই সূর্যের চারিদিকে ঘরে | ধর্মযাজকেরা  ব্যাক্তিগত ধর্মীয় স্বার্থসিদ্ধির চরিতার্থে গ্যালিলিওর তথ্যকে ভুল বলে প্রমান করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলো | তুলনামূলকভাবে মমতা ব্যানার্জী যদি সূর্য্য হন তার আশেপাশে তৃণমূলের সমস্ত নেতামন্ত্রী থেকে শুরু করে আজকের  তৃণমূল ছাত্রপরিষদের কর্মীরা পর্যন্ত প্রত্যেকেই  তাকে কেন্দ্র করেই গ্রহ , উপগ্রহ ও নক্ষত্ররাজির ন্যায়  আবর্তিত ; তারই আঙ্গুলি হেলনে তাদের আন্দোলের রূপরেখা , লড়াই সংগ্রাম ও কার্যপ্রণালী নির্দেশিত | আর ঠিক এই কারণেই কলেজ পড়ুয়া অল্প বয়সী ছাত্রছাত্রীদেড় সাংগঠনিক ত্রুটি বিচ্যুতি বা কোথাও কোনো মতানৈক্য হলেও সমস্তটাই সামলে নিতে পারবেন তৃণমূল সুপ্রিম এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং |


কলকাতার যোগমায়া দেবী কলেজ পড়ার সময় থেকেই এক বলিষ্ঠ ছাত্রপরিষদের নেত্রী হয়ে উঠেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  | মমতা ব্যানার্জির ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস থেকে জানা যায় ,মমতা কলেজ পড়ুয়া থাকাকালীন  একদিন কলকাতার জাগুবাজারে তার  বক্তৃতা সমৃদ্ধ করেছিল তৎকালীন  মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়কে | তার পর থেকেই সিদ্ধার্থ বাবু নেত্রীর কাছে পরিণত হয়েছিলেন 'মানু দা ' তে | আবার শোভন চট্ট্যোপাধ্যায়ের তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন একবার বেহালা কলেজে বক্তব্য উপস্থাপন করার জন্যই , তখনও মমতা কলেজেপড়ুয়া , জয় করে ছিলেন সবার মন ; এক অচেনা বয়স্ক ভদ্রলোক তার কাছে দুটো তাল সাসের সন্দেশ এনে তাকে বলেছিলেন " ইটা খেয়ে নাও , খুব ভালো বক্তৃতা দিয়েছো | "  আবার রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে এটাও জানা যায় , প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীও একবার কংগ্রেসের কর্মিসভার মিটিংএ বলেছিলেন " এখানে মমতা বলে কে আছে ? " মমতা উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন " আমি " | উত্তরে প্রিয়রঞ্জন বাবু বললেন " চালিয়ে যা , খুব ভালো কাজ করছিস " |  আবার এরপরেই মমতাকে কংগ্রেসের টিকিটে প্রার্থী করা হয়েছিল যাদবপুরে , আশ্চর্যজনক ভাবে হারিয়ে দিয়েছিলেন দাপুটে বিরোধী সি পি আই এমের প্রার্থী সোমনাথ চট্যোপাধ্যায়কে |  


তবে সত্তরের দশকেও ছাত্র রাজনীতি মানে পড়াশুনার পাশাপাশি রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও নীতি আদর্শের ব্যাপারে যথেষ্ট পড়াশুনা করতে হতো | জানতে হতো নিয়ম কানুন , আইন ও লড়াই আন্দোলের রূপরেখা | বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য , বিমান বসু , শ্যামল চক্রবর্তী , সূর্যকান্ত মিশ্র ইনারা প্রত্যেকেই রাজনীতির ময়দানে এসেছেন বাম পন্থী ছাত্ররাজনীতি থেকে ;  অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় , সুব্রত মুখার্জী , প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি , পার্থ চ্যাটার্জী ইনাদেরও উত্থান সেই ছাত্র রাজনীতি থেকে |

তবে বর্তমানে ছাত্ররাজনীতিতে ছাত্র  নেতারা দলীয় নীতি আদর্শের মূল্যায়ন কতটা জানেন সে বিষয়ে প্রশ্ন আছে | অনেকেরই পড়াশুনার মান অতীব নিম্নতর | বাক্যের শব্দ চয়ন সম্পর্কেও ততটা ওয়াকিবহাল নন | বর্তমানের রাজনীতি মানেই প্রযুক্তি নির্ভরতা | ব্যবহৃত হচ্ছে ফেইসবুক , টুইটার , হোয়াটস্যাপ , ইমেইল সহ অন্যান্য অনলাইন পরিষেবা | তবে বর্তমানে এই প্রযুক্তির ডানায় ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে পারবে তো তৃণমূল ? বিশ্বাসের সাথে প্রশ্নচিহ্ন থেকে যাচ্ছে |    

লাল্টু ভট্টাচার্য্যের রিপোর্ট |

Disclaimer: This story & Video is Published by laltu bhattacharjee and has not been created by JK Bangla News & The authenticity of the video has not been verified.

Post a Comment

Previous Post Next Post