জবর খবর বাংলা

লাল্টু ভট্টাচার্য্য , নদীয়া :  করোনা আবহে নদিয়ার শান্তিপুর ও  ফুলিয়া অঞ্চলে শনিবার , 22 শে অগাস্ট অনুষ্ঠিত হলো নিয়মরক্ষার গণেশ চতুর্থীর অনুষ্ঠান | জনসমাগম স্বল্প , পূজার আড়ম্বরও কম অন্যান্য বছরের তুলনায় | তবুও অনুষ্ঠিত হলো নিয়মরক্ষার গণেশ চতুর্থী |

সিদ্ধিদাতা গণেশের জন্মদিনকেই গণেশ চতুর্থী হিসাবে পালন করা হয় | হিন্দু শাস্ত্রের নিয়মানুযায়ী ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষের চতুর্থীর দিন গণেশ চতুর্থীর দিন হিসাবে পালিত হয় |

গণেশ শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের দেবতাই নন , বৌদ্ধ ও জইন্য ধর্ম সম্প্রদায়ের মধ্যেও গণেশ পূজার রীতি রয়েছে | প্রাচীন পূরণের মতানুযায়ী গণেশকে সংস্কৃতি , অর্থ , বিদ্যা , বুদ্ধি , অর্থ বা প্রাচুর্য্যের দেবতা বলে ধরে নেওয়া হয় | সারা ভারতবর্ষের মতো শ্রীলংকা , নেপাল ও মধ্য প্রাচ্যের দেশ গুলিতেও স্বমহিমায় পূজিত হন গণেশ | বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ থেকে ধারণা পাওয়া যায় গুপ্তযুগে সম্ভবত খ্রিস্টীয় চতুর্থ থেকে পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় থেকেই গণেশ পুজোর প্রচলন ঘটে |

আবার ব্রহ্ম বৈবর্ত পূরানের মতে  বিষ্ণুর কাছে মহাদেব পত্নী পার্বতী একটি সুন্দর ফুটফুটে পুত্র সন্তানের কামনা করেন , বিষ্ণুদেবও তাকে ইচ্ছা পূরণের বর দেন | মহাদেব ও পার্বতী ক্রীড়ারত  থাকলে বিষ্ণুদেব একজন ভিখারির ছদ্মবেশে আবির্ভূত হন তাদের কুটিরে | এমন সময় মহাদেবের বীর্য পতিত হয় , ঠিক এরপরেই এক অপূর্ব জ্যোতিসম্পন্ন  পুত্র ভূমিষ্ঠ হয় পার্বতী ও শিবের পালঙ্কে | সেই অপূর্ব ফুটফুটে সদ্য জন্মানো সন্তানটি হলেন ভগবান গণেশ | কিন্তু এরপরেই শিব পত্নী পার্বতী সমস্ত দেবদেবী ও ঋষিগণকে আমন্ত্রণ জানান তাদের কুটিরে পদার্পন করে স্বচক্ষে তার সদ্য বিকশিত সন্তানকে দেখে যাবার জন্য | তাদের সাথে আসেন স্বয়ং শনি দেবও , যদিও শনি দেব কুটিরের বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকেন , জানান তার কুদৃষ্টির কথা | কিন্তু তা সত্ত্বেও পার্বতী নাছোড়বান্দা হবার কারণে চোখের অপাঙ্গ দিয়ে দৃষ্টিপাত করেন গণেশের ওপর , মুহূর্তেই ঘটে বিষম বিপদ , খসে যায় গণেশের মস্তক | শোকে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন পার্বতী | মুহূর্তেই এমত ঘটনার খবর পেয়ে তার বাহন গরুড়ের পিঠে চরে বেরিয়ে পড়েন মস্তকের সন্ধানে | এবার উত্তর দিকে মুখ করে ঘুমানো হস্তির মস্তক কেটে ফেলেন বিষ্ণুদেব , সেটাকে দ্বিখণ্ডিত করে একটি কাটা হাতির মস্তকে এবং অপরটি গণেশের মস্তকে স্থাপন করেন  | আর এই কারণেই গণেশের মস্তকে ঐরাবত বা হাতির মস্তক , এমনটাই বলছে প্রাচীন পুরান |

আর গণেশের সাথেই এমন ঘটনা ঘটেছিলো বলে দেবাদিদেব মহাদেবের আদেশানুযায়ী সনাতন ধর্মের নিয়মানুযায়ী সমস্ত দেবতার পূজার আগে অর্থাৎ সর্বাগ্রে পূজিত হন ভগবান গণেশ , আর সেই রীতি মেনে বাংলা বছরের প্রথমেই গণেশের আরাধনা করা হয় |

পুরান এবং ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস বলছে ভারতবর্ষে সমস্ত দেবদেবীর মূর্তি পুজোর আগে গণেশের পুজো করার ইতিহাস বিরাজমান | ইতিহাসের তথ্যানুযায়ী খৃস্টীয় নবম শতকে গণপত্য নামে এক শ্রেণীর হিন্দু সম্প্রদায়ের আবির্বভাব ঘটেছিলো , আর তারাই প্রথম গণেশ পুজো করেছিল বলে দাবি করা হয় | যদিও কালের নিয়মে সেই সম্প্রদায় এখন বিলুপ্ত | তবে বর্তমান করোনা আবহের কখন বা কোন সময় বিলুপ্তিকরণ ঘটবে তার জন্যই প্রত্যেকেরই প্রার্থনা চলছে সিদ্ধিদাতা গণেশের নিকট |


নদীয়া  থেকে লাল্টু ভট্টাচার্য্যের রিপোর্ট

Disclaimer: This story & Video is Published by laltu bhattacharjee and has not been created by JK Bangla News & The authenticity of the video has not been verified.

Post a Comment

Previous Post Next Post