জবর খবর বাংলা


লাল্টু ভট্টাচার্য্য , নদিয়া :
আজ মহালয়া , প্রাত কাল থেকেই গঙ্গার ধারে মানুষের ঢল এবং পিতৃতরপণের রেওয়াজ লক্ষ্য করা গেলো এবছরেও , তবে কোভিড 19 এর প্রাদুর্ভাব থাকার কারণে অন্যান্য বছরে তুলনায় এবছর যেন জনসমাগম একটু কম । 

   

          মহালয়া মানেই পিতৃ তর্পণ , মহালয়া মানে পিতৃপক্ষের অবসান এবং মাতৃপক্ষের সূচনালগ্ন , এবং মহালয়া মানে মৃৎ শিল্পীদের সুনিপুণ তুলির টানে   মাতৃ মূর্তির চক্ষু অঙ্কন --- এই সকল বিষয়গুলি কে দেখতে অভ্যস্ত আমরা । কিন্তু সনাতন ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মহালয়া একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় ।

           


 সনাতন ধর্মের ইতিহাস থেকে পাওয়া যাচ্ছে ভগবান রামচন্দ্র লঙ্কা বিজয়ের আগে পিতৃ তর্পণ করে দেবী মহামায়ার আরাধনায় বসে ছিলেন এবং মা দুর্গাকে মর্ত্যে নিয়ে এসে ছিলেন । আর এই দিনেই প্রয়াত আত্মারা মর্ত্যে অবতরণ করেন । আর এই প্রয়াত আত্মার মর্ত্যে অবতরণের কাহিনিকেই মহালয়া বলা হয় ,  এই ' মহালয় ' শব্দটি থেকেই মহালয়া শব্দটির  উৎপত্তি ।

             


অন্যদিকে মহাভারতের সূত্র বলছে দাতা কর্নের মৃত্যু হলে , তার আত্মা স্বর্গে গমন করে আর সেখানে তাকে স্বর্ণ ও রৌপ্য দেওয়া হয় খাবার হিসাবে গ্রহণ করার জন্য, দেবরাজ ইন্দ্রের এহেন আচরণে কর্ণ বিচলিত হন । এবং  তার সাথে এমত আচরনের কারণ জিজ্ঞাসা করেন । উত্তরে কর্ণ জানতে পারেন তিনি সারা জীবন মানুষকে প্রচুর ধনরত্ন দান করে এসেছেন , কোনো কোন কালেই তিনি তার পিতামাতার উদ্দেশ্যে কোনো খাদ্যখাবার দান করেন নি এবং তাদের প্রতি কোনো কর্তব্য পালন করেন নি ; যদিও কর্ণ তথ্ক্ষণাথ জানান তিনি তার পিতৃ  ও মাতৃ  পরিচয় সম্পর্খে ভালোভাবে অবগত ছিলেন না । আর ঠিক এরপরেই দেবরাজ ইন্দ্র তাকে মর্ত্যলোকে ফিরে যাবার নির্দেশ দেন , এরপরই কর্ণ স্বর্গ থেকে মর্ত্যে পুনরায় অবতরণ করে 16 দিন ধরে অন্ন ও জল প্রদান করেন ; মহাভারত সূত্রে জানা যায় কর্ণ তার পিতৃ লোকের উদ্দেশ্যে শেষ অন্ন জল প্রদান করেন আশ্বিন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অমাবস্যা তিথিতে । অর্থাৎ যে দিনটি এখন মহালয়া বলে সুপরিচিত ।

           


আবার হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী , সূর্য্য কন্যা রাশির প্রবেশ করলেই তবে পিতৃপক্ষের সূচনা হয় , ধর্মীয় মতানুযায়ী হিন্দুদের বিশ্বাস পিতৃপক্ষের সূচনায় তাদের পিতৃপুরুষেরা পিতৃ লোক পরিত্যাগ করে তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের গৃহে অবস্থান করেন । পরে জলঘন সূর্য্য যখন বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করে , তখন তারা আবার পিতৃ লোকে পুনর্গমন করেন । পূর্বপুরুষেরা যেহেতু তাদের গৃহেই অবস্থান করেন , তাই তর্পণ এর মাধ্যমে হিন্দু পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ।

           


 সুতরাং , অনেকেই ভাবেন পিতৃপুরুষের তর্পণ মানেই নিজেদের পারিবারিক মঙ্গল সাধন । না , শুধুমাত্র পারিবারিক মঙ্গল সাধনই নয় , এর মাধ্যমে বংশ মর্যাদার সুদৃঢ় করন, জীবজগতের সমস্ত প্রাণী ও উদ্ভিদ এবং সমগ্র জীবকুলের মঙ্গল সাধনের প্রার্থনাও করা হয় পিতৃতরপনের মাধ্যমে । এছাড়া আমাদের সমাজে বিবাহ , ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের উপনয়ন প্রভৃতি সমস্ত মাঙ্গলিক কাজেও পিতৃ পুরুষকে জল দানের রেওয়াজ রয়েছে আমাদের সমাজে । 

             


তবে বর্তমানে করোনা আবহে করোনা প্রতিরোধের জন্য সত্যিই কি কিছু প্রার্থনা করা হলো পিতৃ তর্পণ এর মাধ্যমে ? আর প্রার্থনা করা হলেই বা কিভাবে প্রার্থনা করা হলো সেটা নিয়ে একরাশ প্রশ্ন চিহ্ন থেকেই যাচ্ছে । 

          

নদিয়া থেকে লাল্টু ভট্টাচার্যের রিপোর্ট

Post a Comment

Previous Post Next Post