জবর খবর বাংলা


লাল্টু ভট্টাচার্য্য, নদীয়া : আজ শিক্ষক দিবস । যদিও করোনা আবহে বন্ধ সমস্ত শিক্ষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ,  আপাতত বন্ধ রয়েছে শিক্ষক দিবসকে কেন্দ্র করে সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের রেওয়াজ । যদিও গতকাল থেকেই উপহারের দোকানগুলিতে   শিক্ষক দিবসে শিক্ষককে উপহার দেবার জন্য যথেষ্ট জনসমাগম লক্ষ্য করা গেছে ।

1931 সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নাইট হুড ও 1994 সালে ভারতরত্ন উপাধিতে ভূষিত এবং কলকাতা, প্রেসিডেন্সি, অক্সফোর্ড ও মহীশূর  বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য,  ইউনেস্কো ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত , ১৯৫২ সালে ভারতের  উপরাষ্ট্রপতি এবং সর্বোপরি ১৯৬২ তে ভারতে নির্বাচিত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ড: সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিন 5 সেপ্টেম্বর দিনটিকে শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করা হয় ভারতবর্ষে   । রাধাকৃষ্নানের জীবনী সূত্রে জানা যায় ,তিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হবার পরে তার গুণমুগ্ধ ছাত্রছাত্রীরা তার জন্মদিন পালনে উৎসাহী হয়েছিল । উক্ত বিষয় সম্পর্কে তিনি অবগত হয়ে  জানান তার জন্মদিনের পরিবর্তে 5 ই সেপ্টেম্বর দিন টি শিক্ষক দিবস হিসাবে উদযাপিত হলে তিনি বেশি আনন্দিত হবেন । তারপর থেকেই 5 সেপ্টেম্বর দিনটি সারা ভারতবর্ষে  শিক্ষক দিবস হিসাবে উদযাপিত হয় , আবার 1994 সালে ইউনেস্কো 5 অক্টোবর দিনটিকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে , বিশ্বের 19 টি দেশে 5 ই অক্টোবর এবং 11 টি দেশে  ফেব্রুয়ারি মাসের 28 তারিখে শিক্ষক দিবস পালিত হলেও ভারতবর্ষে 5 ই সেপ্টেম্বর দিনটিকে শিক্ষক দিবস হিসাবেই উদযাপিত হয় ।


প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ড: এ. পি. জে আব্দুল কালামের মতানুযায়ী সমাজের তিনজন সামাজিক সদস্য সমাজ গঠনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে এবং সমাজে পার্থক্য এনে দিতে পারে ।

তারা হলেন মা, বাবা এবং শিক্ষক । যদিও প্রাচীন শিক্ষা ব্যাবস্থা , স্বাধীনতার পূর্ব ও তার পরবর্তীকালীন শিক্ষাব্যবস্থা এবং বর্তমান শিক্ষা ব্যাবস্থায় বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্যণীয় । পরিবর্তন এসেছে পাঠ্যসূচী থেকে বিদ্যালয় পরিকাঠামোগত সাজসজ্জায়, আবার করোনা আবহে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার দিকেই যেনো একটু পাল্লাটা ভারী বেশি , পরিবর্তন এসেছে শিক্ষক - শিক্ষিকার বেতন প্রণালিতেও ।


বাংলার প্রাচীন ইতিহাস বলছে , বিদ্যা সাগর শিক্ষা বিস্তার ও নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্য আন্দোলন করলে শান্তিপুরের তন্তুজিবি সম্প্রদায় তাঁতের কাপড়ের ওপর সুতো দিয়ে ডিজাইন করে লিখেছিলেন " বেঁচে থাকো বিদ্যা সাগর চিরজীবী হয়ে" । যেগুলো "বিদ্যা সাগর" শারী নামে পরিচিত ছিল । সুতরাং শিক্ষা সংস্কৃতির উন্মোচনে সমাজে শান্তিপুরের তাঁতিদেরও যথেষ্ঠ ভূমিকা ছিল । আবার দেশ জুড়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেও শান্তিপুরের তাঁতিদের অগ্রণী ভূমিকা লক্ষ্য করা গেছে । স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শান্তিপুরের তাঁত শাড়ির ওপর তাঁতিরা সুতো দিয়ে কারুকার্য করে লিখেছিলেন " ধনধান্যে পুষ্পে ভরা " এবং " বন্দেমাতরম " , অর্থাৎ স্বাধীনতা আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছিল তাঁতি সম্প্রদায় । যার জন্য তাদের বহু নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিলো । কিন্তু তাঁত শিল্পকে রক্ষা করার জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি , শিক্ষকদের বেতন থেকে অন্তত নুন্যতম অংশও যদি সরকার তাঁতি ও মজুর সম্প্রদায়কে দেওয়া যেত, পরিবারগুলি একটু বাঁচতো  । তারা সেই ব্রাত্যই রয়ে গেলেন ।


তাই আজ এই অতিমারী এবং শিক্ষক দিবসের প্রেক্ষাপটে আমাদের সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে আপনাদের নিকট বিনীত অনুরোধ , জেলার শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে সমস্ত শিক্ষা কর্মী বৃন্দ ঐক্যবদ্ধ ভাবে তন্তুজীবি থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের শ্রমজীবী জনতার নিকট সাহায্যের হাত সম্প্রসারণ করুন । সেটাই হতে উঠুক প্রকৃত শিক্ষক দিবস উদযাপন ।

নদিয়া থেকে লাল্টু ভট্টাচার্যের রিপোর্ট

Post a Comment

Previous Post Next Post