জবর খবর বাংলা
লাল্টু ভট্টাচার্য্য :ফুটবলের মাঠে ফুটবল প্রেমীরা উপভোগ করেছেন পেলে , মারাডোনা , রোনালদো ও মেসিদের ; ক্রিকেটের মাঠে বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারির বন্যায় দর্শক মুগ্ধ হয়েছে কপিল , গাভাস্কার ,শচীন , সৌরভ , কোহেলি , ধোনিদের দেখে | আর অন্যদিকে রাজনীতির ময়দানে এক অন্যন্য সাধারণ কিংবদন্তি এবং বর্ণময় চরিত্র ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায় | তাকে রাজনীতির সেরা খেলোয়াড় বললেও খুব একটা ভুল কথা বলা হবে না | তার অসাধারণ রাজনৈতিক বুদ্ধির সাথে ক্ষিপ্রতা , তির্যক ব্যাক্যবান এবং এক কৌশলী সুচতুর ঠান্ডা মস্তিস্ক তাকে প্রত্যন্ত বীরভূমের কীর্ণাহারের বাড়ি থেকে রাইসিনা হিলস এ পাঠিয়ে ছিল | 

প্রণব মুখার্জির ব্যাক্তিগত জীবনের অধ্যায় থেকে জানা যায় একবার ছোটতে কীর্ণাহারের খড়ের ছাউনির ঘরে নামতার বই সুর করে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন ছোট্ট প্রণব , ঘরে জ্বলছিল একটি লম্ফো | হঠাৎ তার মাথার গোড়ায় একটি বিষধর কেউটে সাপ ফনা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল | সেই সময় প্রণববাবুর মা তাকে নৈশহারের জন্য ডাকতে গিয়ে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেখে আতংকিত হয়েছিলেন | কিন্তু একটু পরেই সাপটি সেখান থেকে সরে গিয়েছিলো | তৎক্ষনাৎ প্রণব মুখার্জির মা তাকে আতঙ্কে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন " তুই ভয়ঙ্কর বিপদ থেকে বাচঁলি , তুই একদিন ঠিক রাজা হবি " |  এরপর প্রণব বাবুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সম্পর্কে আমরা কমবেশি প্রত্যেকেই জানি |' খিড়কি থেকে সিংহ দুয়ার এই তোমাদের পৃথিবী 'এই মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না প্রণব মুখোপাধ্যায় | কারণ বেশির ভাগ রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের একটা বিচরণের প্রকৃতি পরিধি থাকে , প্রণব মুখার্জি সেটা কিন্তু লঙ্ঘন করে ফেলেছিলেন | যেমন মালদহ মানে গনিবাবু , মুর্শিদাবাদে অধীর বাবু শেষ কথা , কলকাতায় সৌমেন  মিত্র , বাংলায় মানে মমতা ব্যানার্জী , বিহার মানেই লালুজি --- এরকম আঞ্চলিক রাজনীতির মধ্যে তিনি বিরাজমান ছিলেন না | অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতো ব্যাক্তি আক্রমণ করে গরমাগরম ভাষণে একেবারেই পটু ছিলেন না প্রণববাবু ; আর সেই কারণেই 1986 সালে কংগ্রেস দল থেকে অভিমানের সাথে ফিরে এসে পৃথক দল গঠন করে ভোট লড়তে গেলে প্রায় প্রতি কেন্দ্রেই তার প্রার্থীদের জামানত জব্দ হয়েছিল | আবারও ফিরে গেছিলেন সেই পুরানো কংগ্রেসে | তিনি ইন্দিরা গান্ধীর একজন অনুগত সৈনিক ছিলেন বলে তৎকালীন সময়ে অনেকেই তাকে ইন্দিরা গান্ধীর মানসপুত্র বলতো | 


এক অন্যন্য সাধারণ বাক্পটুতায় সমৃদ্ধ অতি উৎকৃষ্ট মানের রাজনৈতিক নেতা ছিলেন প্রণব | আর সে কারণেই কখনো অর্থমন্ত্রী , কখনো বিদেশমন্ত্রী এবং সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির আসন অলংকৃত করেছেন প্রণব | সবাই নিয়ে একসাথে চলতে ও রাজনীতি করতে ভালোবাসতেন প্রণব মুখার্জী | আর সে কারণেই তিনি ছিলেন একজন রাজনৈতিক চাণক্য | 
একটা কথা আছে ' যা চাওয়া যায় তা পাওয়া যায় না ' | তার ইচ্ছা ছিল ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হওয়া , কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠে নি , প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তাকে ' স্যার ' বলে সম্বোধন করে ডাকতেন | কারণ প্রণববাবু ভারতের অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন মনমোহন সিং প্রণব মুখার্জির অধীনে কাজ করতেন , সেই সূত্রে এই ডাক | 
প্রণব মুখার্জী তার রাজনৈতিক জীবনে এবং  সমগ্র জীবনে মাত্র দুইটি হিন্দি সিনেমা দেখেছিলেন বলে জানা যায় | সেই সিনেমা দুটি হলো 1. পিকু  এবং 2. রং দে বাসন্তী | এর মধ্যে পিকু সিনেমাটি তিনি দেখেছিলেন অটল বিহারি বাজপেয়ীজির সাথে | শোনা যায় রং দে বাসন্তী সিনেমাটি হাফ টাইম পর্যন্ত দেখে উঠে পড়েছিলেন প্রণব মুখার্জী , বলে ছিলেন " আমার কাজ হলো দেশের কাজ করা , সিনেমা দেখা নয় | " 
তার রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাসে বাংলার ' আম ও লিচু ' নিয়ে একটা বিতর্কের কথা জানা যায় | জানা যায় একদিন সংসদে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধির আড্ডার আসর চলছিল | তার মাঝেই বিহারের লালু প্রসাদ যাদব বিহারের মুজাফ্ফর পুরের আম ও লিচুর গুণমানের প্রশংসায় খুব উদ্বেল হয়ে উঠেছিলেন | এমন সময় প্রণব বাবু তাকে থামিয়ে দিয়ে তার দিকে মুর্শিদাবাদের আম ও লিচুর তুলনা টানেন | এবং বলেন মুর্শিদাবাদের আম ও লিচু ভারতবর্র্ষের উৎকৃষ্টতম | বাংলায় যা আম , লিচু হয় সারা ভারতবর্ষে কোথাও সেভাবে হয় না | এরপর প্রণববাবু বেশ কয়েকবছর সংসদে আম ও লিচু বিতরণ করেন বলেই শোনা যায় | 



তবে 13 সংখ্যাটির ওপর আগাগোড়াই তিনি দুর্বল ছিলেন তার ব্যাক্তিজীবনে | কারণ তিনি বিবাহ করেছিলেন 13 ই জুলাই , সংসদে প্রণববাবুর অফিস নাম্বার ছিল 13, আবার তার আবাসনের ঠিকানা ছিল 13 নং তালকটার রোড , এবং তিনি ছিলেন দেশের 13 তম রাষ্ট্রপতি | সুতরাং এই 13 সংখ্যাটির ওপর তিনি এই কারণে আগাগোড়াই দুর্বল ছিলেন | 
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে তার কীর্ণাহারের বাড়ি থেকে শোকে বিহ্বল হয়েচম্পা গোটা দেশ  | আমরা সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে প্রত্যেকেই তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি এবং তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই | 
                   
নদীয়া থেকে লাল্টু ভট্টাচার্য্যের রিপোর্ট

Post a Comment

Previous Post Next Post