জবর খবর বাংলা



লাল্টু ভট্টাচার্য্য, নদীয়া :
দিনের পর দিন মাসের পর মাস করোনা আবহে সরকারি বিদ্যালয়গুলো সম্পূর্ণ বন্ধ থাকার কারণে বাড়িতেই আছেন বিদ্যালয়ের শ্রদ্ধে়য় শিক্ষক শিক্ষিকা মন্ডলী । বিদ্যালয় ছাড়াও সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন অন্যান্য অফিস আদালতগুলোতে কাজ চলছে বিভিন্ন শিফটে । কিন্তু জনসমাগমকে এড়িয়ে যাবার জন্যই সরকারি নির্দেশেই বন্ধ রয়েছে বিদ্যালয়গুলি ।  5 ই সেপ্টেম্বরের পরবর্তী সময় থেকে বিদ্যালয়গুলিতে পঠন পাঠন প্রণালী চালু করার চিন্তাভাবনা সরকার করলেও বাস্তবে তা সম্ভবপর হয় নি । আর ঠিক এই পরিস্থিতিতেই মাসের পর মাস বিনা পরিশ্রমেই স্কুল শিক্ষকদের সম্পূর্ণ বেতন দিয়ে চলেছেন আমাদের রাজ্য সরকার । 

               



  অথচ এই করোনা আবহেই দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যার্থ এই রাজ্য সরকার । বাজারে আলুর কেজি 32 থেকে 35 টাকা , পটল ও বেগুন 70-80 টাকা , টমেটো 100 টাকা প্রতি কেজি ; রুই- কাতলা মাছ প্রতি কেজি 300 থেকে 400 টাকা , ইলিশের দাম  600 থেকে 800 টাকা প্রতি কেজি । এছাড়াও আরও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যও গগনচুম্বী । 

               সমাজে সংস্কৃতি ও বিনোদনের সাথে যুক্ত মানুষগুলোর পেশা প্রায় একপ্রকার বন্ধ, এমত পরিস্থিতিতে কোথাও নৃত্য শিল্পী মুরগির মাংস বিক্রেতা , আবার কোথাও গৃহশিক্ষক সবজি বিক্রেতা --- সম্পূর্ণ সমাজেই যেন ধরা দিয়েছে এক বদলের চেহারা ।  নচিকেতার কথায় " কোনো এক উল্টো রাজা উল্টো বুজলি প্রজার দেশে , চলে সব উল্টো পথে উল্টো রথে উল্টো বেশে ।"

               শিক্ষক সম্প্রদায়ের মানুষরা সমাজ গড়ার কারিগর হিসাবে পরিচিত হলেও ,তারা এবাপারে এখনো কেন নির্বাক সে নিয়ে যথেষ্ট জল্পনা বেড়েছে সাধারণের মনে । অথচ বিগত বছর অর্থাৎ 2019 সালের জুন মাসে "প্রাথমিক শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশন" তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তাদের বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে । কলকাতার বিধান নগরের করুণাময়ী থেকে বিকাশ ভবন পর্যন্ত মিছিল মিটিং করে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছিলেন । দিনের পর দিন  বিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীদেরদের পঠন পাঠন  ব্রাত্য রেখে রাস্তায় শুয়ে পরে অনশন শুরু করেছিলেন শিক্ষক শিক্ষিকা মন্ডলী । সেখানে অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন অনেকে । এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে নবান্ন ---- প্রতিটি জাইগাতেই শিক্ষকদের আন্দোলনের আস্ফালন দেখা গিয়েছিল । গঠন করেছিলেন তাদের ট্রেড ইউনি়য়ন । কিন্তু এখন আপনারা কি ঘুমিয়ে পড়লেন ? এখন ওই ট্রেড ইউনিয়নগুলি থেকে অর্থ সংগ্রহ করে শ্রমজীবী জনতার  পাশে দাঁড়ান,  না হলে  সমাজ কিভাবে বুজবে আপনারা প্রকৃত শিক্ষক বা মানুষ গড়ার কারিগর ? পাশে দাঁড়ান বিভিন্ন কলাকুশলীদের , সাংস্কৃতিক কর্মীদের , মৃৎশিল্পী দের ,ইলেকট্রিক শিল্পীদের যারা তাদের নিজের প্রতিভার উন্মোচন ঘটিয়ে অর্থোপার্জন করেন । সাহায্যের হাত সম্প্রসারণ করুন ওদের দিকে । নাহলে যে মানুষ আপনাদের স্বার্থপর বলবে ! 

               


অনেক শিক্ষক মহাশয় ইতিমধ্যে ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন এটা একটি হিংসাত্মক প্রতিবেদন । কিন্তু না, এটাই বাস্তব , আর বাস্তবকে না মান্যতা দেওয়াটাও একটা হিংসা । যে ছেলেটা তার প্রতিভার উন্মোচন ঘটিয়ে সমাজ থেকে সততার সাথে অর্থোপার্জন করে , তার বুদ্ধিমত্তাও আপনাদের থেকে কোনো অংশে কম নয় , তিনিও তার প্রাইভেট সংস্থা থেকে হয়তো মাসে সন্মানিক বেতন পেতেন বা যথেষ্ট ভালো অর্থোপার্জন করতেন তার নিজের শিল্পিসত্ত্বার জাগরণ ঘটিয়ে , কিন্তু সেগুলো  বর্তমানে গুরুত্ব হারিয়েছে । 


আবার একদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও অন্যদিকে এই স্কুল শিক্ষা কর্মীদের বাড়িতে বসিয়ে সম্পূর্ণ বেতন দেওয়া সত্যিই কতটা যুক্তিসঙ্গত সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে ।

     


          তাই মাননীয় শিক্ষক মহাশয় , আপনার কাছেও আমাদের সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ ওই ট্রেড ইউনিয়নগুলোর সাথে যথেষ্ট আলোচনা করে মানুষের এই দুর্দিনে মানুষের সাথে ও মানুষের পাশে থাকুন । ইতিহাস এটারও সাক্ষী আছে একসময় সমাজে শিক্ষা ও স্বাধীনতার জন্য শ্রমজীবী জনতা যথেষ্ট ভাবে আন্দোলনে মুখর হয়েছিলেন । কিন্তু আজ সাম্রাজ্যবাদীদের ভিড়ে ওরাই ব্রাত্য ।

                  

Post a Comment

Previous Post Next Post